স্বদেশ ডেস্ক:
দলের জন্য ত্যাগী-পরীক্ষিত, নিবেদিতপ্রাণ নেতাদের বাদ দিয়ে ‘অপরিচিত’ ও ‘নিষ্ক্রিয়’ একজনকে রাজশাহী জেলা যুবদলের আহ্বায়ক করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং যুবদলের অনেক নেতাকর্মীই। তাদের ভাষায়, দলের এ দুর্দিনে ত্যাগীদের নেতৃত্বে না এনে রাজশাহীর মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলায় ‘অপরিচিত’ একজনকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এর মাধ্যমে ‘নিজেদের পায়েই কুঠারাঘাত’ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে গত শুক্রবার রাজশাহী জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। দুই সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সদ্য বিলুপ্ত কমিটির ২৪ নম্বর সহসভাপতি মাসুদুর রহমান সজনকে। আর সদস্য সচিব হয়েছেন রেজাউল করিম টুটুল। একই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রাজশাহী মহানগর যুবদলের তিন সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আবদুল কাদের বকুলকে আহ্বায়ক, মো. শফিকুল ইসলাম জনিকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং মো. রফিকুল ইসলাম রবিকে করা হয়েছে সদস্য সচিব। মহানগর কমিটির বিষয়ে দলে তেমন কোনো অভিযোগ না থাকলেও জেলা কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পাওয়া সজনকে নিয়েই যত আপত্তি।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জেলা যুবদলের নতুন আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান সজন নগরীর আরডিএ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির বর্তমান সভাপতি ফরিদ মাহমুদ হাসানের জামাতা। সেই সুবাদে সজনও একজন ব্যবসায়ী নেতা। করোনার এ ক্রান্তিকালে রাজশাহী শহরের দোকানপাট খোলার আন্দোলনে তাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। তা ছাড়া সদ্যবিদায়ী কমিটিতে ২৪ নম্বর সহসভাপতির দায়িত্বে থাকা এ নেতা দলীয় কার্যক্রমেও ছিলেন নিষ্ক্রিয়। ফলে দলের নেতাকর্মীরাই তাকে চেনেন না। নেতাকর্মীরা আরও বলছেন, দলের রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকতের সঙ্গে সজনের ভালো সখ্য । এ কারণেই মূলত নিষ্ক্রিয় সজন একেবারে জেলা যুবদলের আহ্বায়কের দায়িত্ব পেয়ে গেছেন। এ বিষয়ে জানতে শাহীন শওকতের মুঠোফোনে কল দিলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জেলা যুবদলের সাবেক এক নেতা বলেন, ‘সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতির পদ ছাড়া ইতিপূর্বে সজনের রাজনৈতিক আর কোনো পদ-পদবি ছিল না। হঠাৎ করে পদ পেয়ে এতদিন নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিকে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া নিজের পায়ে কুঠারাঘাতের শামিল বলে মনে করি।’ তবে মাসুদুর রহমান সজনের দাবি, তিনি এক সময় বাঘার আড়ানী ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সহদপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু রাজশাহী কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে মাস্টার্স করলেও ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে আসতে পারেননি বলে স্বীকার করেছেন তিনি।
সদ্যবিলুপ্ত কমিটির একাধিক সহসভাপতি জানান, রাজনীতির সুবিধার্তে ইতিপূর্বে মহানগরীর বাসিন্দা এমন কাউকে জেলা যুবদলের শীর্ষ নেতৃত্বে স্থান দেওয়া হতো। কিন্তু কোনো অদৃশ্য শক্তির মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ের নিষ্ক্রিয় একজনকে জেলার শীর্ষ দায়িত্ব দেওয়া হলো তা তাদের বোধগম্য নয়। জেলা যুবদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম সমাপ্ত বলেন, ‘রাজশাহী জেলার অধীনে নয়টি থানা ও ১৪টি পৌরসভা রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটের নেতাকর্মীই জেলা যুবদলের দায়িত্ব দেওয়া আহ্বায়ককে নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করছেন। অবিজ্ঞতাহীন, অপরিচিত ও পাদুকা ব্যবসায়ীকে জেলা যুুবদলের আহ্বায়ক করায় কেউ মেনে নিতে পারছেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমার নামে ১৩টি মামলা চলমান। আর যাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে তার নামে কোনো মামলাই নেই। যিনি আরডিএ মার্কেটের ব্যবসায় নেতৃত্ব দেন, যাকে রাজনীতির মাঠে কোনোদিন দেখা যায়নি, তার নামে মামলা থাকবে না এটাই স্বাভাবিক।’
জেলা যুবদলের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান সজন বলেন, ‘রাজনীতিতে পক্ষ-বিপক্ষ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আমার যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা আছে বলেই তো শীর্ষ নেতৃত্ব আমাকে জেলার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন। যুবদল বৃহৎ একটি সংগঠন। সুতরাং যারা দায়িত্ব পাননি, তারা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াবে এটাও স্বাভাবিক।’ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি সজনকে চিনি না। তারপরও বলব, যোগ্য দেখেই তাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে যদি চালাতে না পারে, তা হলে আমরা অন্য চিন্তাভাবনা করব।’